“আমা'র মনে হয়, প্রতিরাতে ঘু'মের মধ্যে কেউ আমা'র সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে।”.ডাঃ জুথি নড়েচড়ে বসলেন। তার সামনে বসা মেয়েটাকে তার প্রথম থেকেই সুবিধার মনে হচ্ছেনা।
চেম্বারে ঢুকার পর থেকে সে কোনো কথা বলেনি। টানা দু-তিন মিনিট ডাঃ জুথি বারবার তাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করেছেন। যদিও হিস্ট্রি ফাইলে রোগীর নাম থাকে, তবুও কথা শুরু করার জন্য সাধারণত ডাক্তাররা নাম জিজ্ঞাসা করে থাকেন। ডাঃ জুথি মোটামুটি বির'ক্ত হয়ে যখন মেয়েটিকে বের হয়ে যেতে বলবেন, ঠিক সেই সময় মেয়েটি এই কথাটা বললো। ডাঃ জুথি একটু অবাক এবং বির'ক্ত হলেন। তারপর মেয়েটিকে জিজ্ঞেস
করলেন, “আপনার বয়স কত?” “আঠার বছর ” ” আপনার সমস্যাটা আমি ঠিক বুঝতে পারছিন'া। একটু ঠিকঠাকভাবে বলুন। তার আগে নিজের নাম বলুন।”মেয়েটা দীর্ঘশ্বা'স ফেললো। তারপর বললো, “আমা'র নাম মিমি। মিমি জান্নাত। আমা'র কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছে রাতের বেলা ঘু'মের মধ্যে কেউ আমা'র সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। আমা'র খুব খারাপ লাগে। ম্যাম প্লিজ আমাকে হেল্প করুন।”
ডাঃ যুথি কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। রীতিমত পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে। মুখে বির'ক্তি এনে ডাঃ যুথি মেয়েটিকে বললেন, “আপনি কি ম্যারিড নাকি আনম্যারিড? বিয়ে হয়েছে আপনার?” — ” না, আমা'র বিয়ে হয়নি।” ডাঃ যুথি মনে হয় আবারো বির'ক্ত হলেন। সম্ভবত তার কথায় কথায় বির'ক্ত হবার বাতিক আছে। ” মিস মিমি, আপনি কি জানেন আমি কিসের ডাক্তার?” মিমি থতমত খেয়ে গেলো।
বলল, “জি, আপনি গাইনী বিশেষজ্ঞ।”” তাহলে আপনি আমা'র কাছে কেন এসেছেন জানতে পারি? আপনি যে সমস্যার কথা বলছেন, এর চিকিৎসক আমি নই। আপনি বরং কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে দেখা করুন। “মিমি দুঃখী দুঃখী চোখে ডাঃ যুথির দিকে তাকিয়ে রইলো। করুণ গলায় বললো, “পাগলের ডাক্তারের কাছে কেন যাব' ম্যাডাম? আমি তো পাগল নই।”
ডাঃ যুথি এবার একটু থতমত খেয়ে গেলেন। –” না, মানে আমি আপনাকে পাগল বলিনি। তবে আপনার সমস্যা টা মানসিক। আপনি যেটা বলছেন, সেটা কখনও সম্ভব না। যাকেই বলবেন এটা নিয়ে সে ই হাসাহাসি করবে।” একটু থেমে ডাঃ যুথি আবার বললেন, “আপনি এখানে কার সাথে এসেছেন? মানে আপনার গার্ডিয়ান কোথায়?” মিমি আস্তে করে বললো, “আমি একাই এসেছি ম্যাম। বাসায় কাউকে কিছু জানাইনি।
আমা'র ফ্যামিলি খুবই কনজারভেটিভ। আমি তাদেরকে বলার সাহস পাচ্ছিন'া। টাকা জমিয়ে আমি একাই এসেছি আপনার কাছে। প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।”ডাঃ যুথি মিমির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলেন না। বললেন, ” বুঝলাম না। আপনার বাসায় আপনি জানাননি মানে! আপনি আপনার মা কে বলেন নি? আর আপনার সমস্যাটা মানসিক। এর সাথে ফ্যামিলি কনজারভেটিভ এর সম্পর্ক কি? ”
মিমি টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটার দিকে তাকালো। ডাঃ যুথি বুঝতে পারলেন মিমির পানির পিপাসা পেয়েছে। তিনি মিমির দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিলেন। মিমি একটু ইতস্তত বোধ করলেই পরমুহূর্তে গ্লাস টা নিয়ে পানিটুকু খেয়ে নিল। কৃতজ্ঞতাপূর্ণ হাসি দিয়ে মিমি বলতে শুরু করলো। ” ম্যাম, গত একমাস ধরে প্রায় প্রতিরাতেই আমা'র মনে 'হত, ঘু'মের ভেতর কে বা কারা' আমা'র কাছে আসে। আমা'র জামা-কাপড় খোলার চেষ্টা করে।
প্রথম প্রথম শুধু চেষ্টা করতো। কিন্তু গত দুস'প্তাহ আগে আমা'র মনে হলো.. ” মিমি চুপ হয়ে গেলো। ডাঃ যুথি এবার আর বির'ক্ত হচ্ছেনা। কেন যেন তার পুরো ব্যাপারটা জানতে বেশ কৌতুহল হচ্ছে। চেম্বারের বাইরে আরো প্রায় পাঁচ- ছয়জন রোগী অ'পেক্ষা করছে। মিমি মেয়েটা বেশ সময় নষ্ট করছে। তবুও যুথি কিছু বলছেনা। ডাঃ যুথি মিমিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “গত দুস'প্তাহ আগে কি হয়েছে?” মিমি জিহবা দিয়ে শুষ্ক ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিল।
তারপর বললো, ” সেদিন রাতে আমা'র মনে হলো কেউ আমা'র সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে ফেলেছে। আমি খুব চেষ্টা করেছিলাম ওটাকে সরাতে। কিন্তু আমি এক চুলও নড়তে পারছিলাম না। ঐ জিনিসটা খুব ভারী ছিলো।”ডাঃ যুথি অবাক হয়ে গেলেন। বলে কি এই মেয়ে! এতোক্ষন বললো শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করে। আর এখন বলছে রীতিমত শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেছে! তাও আবার ঘু'মের ভেতর! ডাঃ যুথি মিমিকে বললেন, “কিছু মনে করো'না।
আমি তোমাকে তুমি করেই বলছি। আমাকে এবার ঠিক করে আসল কথাটা বলো। আমা'র কাছে কেন? মানে একজন গাইনোকোলজিস্ট এর কাছে কেন এলে?” মিমি মাথা নিচু করে রইলো। ডাঃ যুথি খেয়াল করলেন মেয়েটার চোখ টলমল করছে। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে মিমির পাশে এসে দাঁড়ালেন। মিমির কাঁধে হাত রাখতেই আচমকা মিমি উঠেই ডাঃ যুথিকে জড়িয়ে ধরলো। ডাঃ যুথি সামান্য চমকে গিয়ে গভীর মমতায় মিমির পিঠে
হাত বুলাতে লাগলেন। ডাঃ যুথির মেয়ের বয়সও আঠারো। মিমি তার মেয়ের বয়সী। এই মেয়েটির জন্য হঠাৎই তিনি গভীর মমতা বোধ করতে লাগলেন। মিমি কাঁদতে কাঁদতে বললো, ম্যাম, আমা'র পেটে কিছু আছে। আমি সম্ভবত প্রেগন্যান্ট ম্যাম।” ডাঃ যুথি মিমিকে ছাড়িয়ে নিলেন। আরেকগ্লাস পানি রে'ডি করে তিনি মিমির দিকে ধরলেন। মিমি পানি খেয়ে শান্তভাবে বসলো। ডাঃ যুথি বললো, ” শান্ত হও মা। আমাকে এবার বলো তুমি কিভাবে বুঝলে তুমি প্রেগন্যান্ট? ”
–“আমা'র গত দু-তিনদিন ধরে প্রচন্ড মাথা ঘুরছিলো। যা খেতাম বমি হয়ে যেতো। শরীর খুব খারাপ লাগছিলো। গতস'প্তাহে আমা'র পিরিয়ডের ডেট ছিলো। কিন্তু পিরিয়ড হচ্ছিলো না। আমা'র কেমন যেন সন্দে'হ হচ্ছিলো। যদিও এটা সন্দে'হ করাটাও হাস্যকর আমি জানি। যেখানে সত্যিকারের কোনো পুরুষ আমা'র সংস্পর্শে আসেনি, সেখানে শুধুমাত্র ঘু'মের ভিতর শারীরিক সম্পর্কের অনুভূ'তি অনুভব করে নিজেকে প্রেগন্যান্ট
ভাবা অত্যন্ত হাস্যকর। কিন্তু তবুও মনের খচখচানি দূর করতে আমি গতকাল প্রে'গ্নেন্সি কিট দিয়ে ইউরিন চেক করেছি। আর..” ডাঃ যুথি মিমির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, “আর দেখলে প্রেগন্যান্সি কিটে রেজাল্ট পজিটিভ আসলো, তাইতো?” –“হ্যা” ডাঃ যুথি হাসলেন। বললেন, “প্রেগন্যান্সি কিট পজিটিজ আসলেই প্রেগন্যান্ট হয়না বোকা মেয়ে। এই কিট অত্যন্ত ফালতু। অবিবাহিত মেয়েও ইউরিন চেক করলে মাঝে মাঝে পজিটিভ দেখায়।
তুমি সত্যিই যদি কিছু না করে থাকো, তাহলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এসব ইউরিন টেস্ট এর রেজাল্ট বেশিরভাগ সময়ই ভুল আসে।”মিমি ইতস্তত ভাবে বললো, “জানি ম্যাম। কিন্তু কেন যেন আমি পেটের ভিতর কোনো কিছুর অস্তিত্ব টের পাই।” –“ওটা তোমা'র মনের ভুল মিমি। মাত্র দুই স'প্তাহে কোনো ভ্রুণের অস্তিত্ব খুব একটা টের পাওয়ার কথা না।” –“তবুও ম্যাম। একটা আলট্রাসনোগ্রাফি যদি করতেন, খুব উপকার 'হতো।
চিন্তায় কয়েকরাত ঘু'মাতে পারছিন'া। প্লিজ ম্যাম।”ডাঃ যুথি কিছু একটা ভাবলেন। তারপর বললেন, “ঠিক আছে। আমি আলট্রাসনোগ্রাফির কথা লিখে দিচ্ছি। পাশের রুমে গিয়ে টেস্ট করিয়ে এসো।” মিমি একবার কৃতজ্ঞতাপূর্ণ দৃষ্টিতে ডাঃ যুথির দিকে তাকিয়ে পাশের রুমে টেস্ট করাতে চলে গেলো।
ডাঃ যুথির হাতে মিমির তলপেটের আলট্রাস্নোগ্রাফির রিপোর্ট। তিনি রিপোর্ট হাতে নিয়ে থ হয়ে বসে আছেন। দশ বছরের ডাক্তারী অ'ভিজ্ঞতায় তিনি কোনোদিন যা দেখেন নি, তা আজ দেখছেন। ডাঃ যুথির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বেল বাজিয়ে পিএস কে ডেকে বললেন মিমিকে ভিতরে পাঠিয়ে দিতে। মিমি ঢোকার আগে ডাঃ যুথি কলিগ ডাঃ অনুপম কে ফোন দিয়ে ইমা'রজেন্সি চেম্বারে আসতে বললেন।